আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী

দারুল উলূম হাটহাজারী’র সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ক্বওমী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম এতদাঞ্চলে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনের গোড়াপত্তন করে। ইসলামের প্রচার-প্রসারে দারুল উলূম হাটহাজারীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস অতি দীর্ঘ। তদানীন্তন বৃটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সামাজিকতা, তাহযীব-তামাদ্দুনের অবস্থা ছিল মুসলিম মিল্লাতের প্রতিকূলে। ঈমান, আমল, তাওহীদ, রিসালাত, শরীয়ত ও দ্বীন সম্পর্কে অধিকাংশের অজ্ঞতা ছিল সর্বজনবিদিত। মুসলিম সমাজের বৃহদাংশ শিরক, বিদ্আত, কবর পজা, বৃক্ষ পূজা ও ঈমানের পরিপন্থী কুসংস্কার, হানাহানী, রাহাজানী তথা ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপে ছিল নিমজ্জিত। মুসলমানের অধঃপতনের এ চরম যুগ সন্ধিক্ষণে পূর্ব বাংলার বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলার কয়েকজন খ্যাতনামা উলামায়ে কিরাম ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ হতে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তাঁরা এদেশের মুসলমানদেরকে কুরআন হাদীস ও দ্বীন-শরীয়তের সহীহ ইলম শিক্ষাদানের নিমিত্তে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দের অনুকরণে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

তদানিন্তন নিখিল ভারতের সর্বজনমান্য আলিমে হক্কানী, যুগশ্রেষ্ঠ বুযুর্গ, হযরত মাওলানা ফযলুর রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদী (রাহ্.)এর সুযোগ্য শিষ্য, দারুল উলূম দেওবন্দের কৃতি ছাত্র, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদার প্রচার-প্রসার বাস্তবায়নের সংগ্রামী অগ্রনায়ক, আশেকে কুরআন হযরত আল্লামা আবদুল ওয়াহেদ (রাহ্.) বাংলাদেশে দেওবন্দী তরীকার মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সুদূর প্রসারি প্রচেষ্টার ফলে এবং হযরত মাওলানা আবদুল হামিদ (রাহ্.) ও হযরত মাওলানা সুফী আযীযুর রহমান (রাহ্.)এর সক্রিয় সহযোগিতায় এবং হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রাহ্.)এর নির্দেশে হযরত শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ (রাহ্.) ১৩১৫ হিজরী মোতাবেক ১৮৯৭ ইংরেজী সনে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীতে ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম মুঈনুল ইসলামের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন।

সর্বপ্রথম তিনি হাটহাজারী থানা সদর হতে তিন কিলোমিটার দূরে চারিয়া গ্রামে স্থানীয় ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষা দান করতে থাকেন। অতঃপর হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রাহ্.) ও হযরত মাওলানা সুফী আযীযুর রহমান (রাহ্.)এর পরামর্শক্রমে চারিয়া গ্রাম হতে স্থানান্তর করে হাটহাজারী বাজারের ফকির মসজিদের পার্শ্বস্থ মিঠাহাটায় আনুমানিক ১৩১৭ হিজরী মোতাবেক ১৮৯৯ ইংরেজী সনের কোন এক সময়ে নবপর্যায়ে মাদ্রাসা চালু করেন। অনিবার্য কারণ বশতঃ উক্ত স্থান হতে মাদ্রাসা স্থানান্তর অত্যাবশ্যক হয়ে উঠে।

এহেন স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে হযরত মাওলানা আবদুল ওয়াহেদ (রাহ্.), হযরত মাওলানা সুফী আযীযুর রহমান (রাহ্.), হযরত মাওলানা আবদুল হামিদ (রাহ্.)- এ তিন বুযুর্গের সাথে প্রত্যেক চাঁদের ১৩ তারিখে; এই নিয়মে পূর্ণ এক বৎসর যাবৎ হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ (রাহ্.) স্থায়ীভাবে মাদ্রাসা চালুকরণ ও মুসলমানদের দ্বীনি অবস্থার সংশোধন সম্পর্কে পরামর্শ করতে থাকেন। এ সময় কিছুদিনের জন্য হাটহাজারী বাস স্ট্যান্ডের দক্ষিণ পার্শ্বস্থ ঝাড়ুয়া দীঘির মসজিদের পার্শ্বে মাদ্রাসার তা’লীমের কাজ আঞ্জাম দেন।

অতঃপর আল্লাহ পাকের মেহেরবানীতে বুযুর্গ চতুষ্ঠয়ের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় সুদীর্ঘ এক বছর পরামর্শের বরকতে স্থানীয় দ্বীনদার দানশীল ব্যক্তিত্ব মরহুম গোলবদন জমাদারের স্ত্রী পুত্রগণের বদান্যতায় মাদ্রাসার স্থায়ী গৃহনির্মাণের জন্য জায়গা প্রাপ্ত হন এবং ঐ স্থানে হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ (রাহ্.) ১৩১৯ হিজরী মোতাবেক ১৯০১ ইংরেজী সনে স্থায়ীভাবে মাদ্রাসা স্থাপনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

অতঃপর আল্লাহ পাকের মেহেরবানীতে বুযুর্গ চতুষ্ঠয়ের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় সুদীর্ঘ এক বছর পরামর্শের বরকতে স্থানীয় দ্বীনদার দানশীল ব্যক্তিত্ব মরহুম গোলবদন জমাদারের স্ত্রী পুত্রগণের বদান্যতায় মাদ্রাসার স্থায়ী গৃহনির্মাণের জন্য জায়গা প্রাপ্ত হন এবং ঐ স্থানে হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ (রাহ্.) ১৩১৯ হিজরী মোতাবেক ১৯০১ ইংরেজী সনে স্থায়ীভাবে মাদ্রাসা স্থাপনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

প্রথম দিনই হাটহাজারী থানার বিভিন্ন এলাকার ছাত্র ছাড়াও রাঙ্গুনীয়ার ১ জন ও বার্মার ১ জন ছাত্রকে ভর্তি করা হয়। পর্যায়ক্রমে প্রথম ৭ দিনেই ৫০ জন ছাত্র ভর্তি হয়। দেশবরেণ্য বুযুর্গানে দ্বীনের হাতে গড়া সেদিনের জমাআতে পঞ্জম পর্যন্ত মাদ্রাসা আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম নামে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উপমহাদেশের অন্যতম ও বাংলাদেশের প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিগণিত।

আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে সবার প্রাণপ্রিয় “বড় মৌলভী সাহেব” নামে খ্যাত, বানীয়ে দারুল উলূম হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ্ (রাহ.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী আজ শত বর্ষ অতিক্রম করে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে প্রতিষ্ঠাতা মুরুব্বীগণের মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নে নিরলস সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।

দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারীকে কেন্দ্র করে এ দেশে হাজার হাজার দ্বীনি মাদ্রাসা, মক্তব, খানকা, মসজিদ, ইবাদতখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পবিত্র কুরআন-হাদীস তথা ইলমে ওয়াহীর অসাধারণ প্রচার প্রসার হয়েছে। প্রত্যক্ষভাবে এ প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার উলামায়ে কিরাম তৈরী হয়ে দেশ-বিদেশের আনাচে-কানাচে দ্বীনের বিভিন্ন পর্যায়ের খেদমতে নিয়োজিত আছেন।

Facebook Twitter Youtube Whatsapp